করোনার অকাল প্রয়াণ!

মনোজিৎ কুমার রায়

0

বাংলাদেশে করোনা নামক ভাইরাসের আবির্ভাব সাত মাস  পেরিয়ে আট মাসে পড়লো। এই সাত মাসে কি শিখলাম আর  সামনের দিনের জন্য কি রেখে যাচ্ছি! কি অনুধাবন করলাম, কি হারালাম আর কি পেলাম।

ঘটনা-১ঃ 

করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে আমরা ক জনাই বা মাস্ক পড়তাম। মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনা আসলো। শুরু হয়ে গেল মাস্ক পড়ার হিড়িক। কেউ কেউ একটা মাস্ক , কেউ বা দুইটা মাস্ক পড়া শুরু করে দিল।মাস্ক পড়লেই করোনা থাকবে না এই বিশ্বাস ও অনেকের  তৈরি হয়ে গেল।০৫ টাকার মাস্ক হয়ে গেল ১০ টাকা, এরপর ২০ টাকা, এরপর ৩০ থেকে ৪০ টাকা ,…এরপর মার্কেট আউট।শুরু হয়ে গেল মাস্ক এর গুনাগুন বিশ্লেষন।সারজিক্যাল, N95 নাকি KN95।সেই সুযোগে নকল মাস্কের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল।এভাবে চলল বেশ কিছুদিন।লকডাউন উঠে গেল,মাস্কের বাজার আবার পড়ে গেল।পুরোনো চেহারায় ফিরে গেল বাংলাদেশ।

মাস্কবিহীন ডাবওয়ালার ডাবের দোকানে একদিন…

আমিঃ ভাই, একটা ডাব দেন। আপনি মাস্ক পড়েন না কেন? করোনার ভয় নাই?

ডাবওয়ালাঃ  কি কন ভাই।করোনা আর তো নাই

আমিঃ প্রতিদিন এত মানুষ মারা যাচ্ছে, আর আপনি বলছেন করোনা নেই?

ডাবওয়ালাঃ করোনা বড় লোকের অসুখ।যারা বেশি পাপ করছে, এদের করোনা মরোনা হয়।

আমিঃ সবাই যে বড়লোক কিভাবে বুঝলেন? অনেক গরীব মানুষ ও মারা যাচ্ছে।

ডাব ওয়ালাঃ কই আমরা তো মাস্ক পড়িনা অহন আর, আমাদের করোনা তো ধরে না।

উওর জানা নেই, তাই আর কথা বলার সাহস পেলাম না।আমি এক ডাব ওয়ালাকেই বুঝাইতে পারলাম না, রাষ্ট্র সকল মানুষকে কিভাবে বুঝাবে সেটাই খুজতে চেষ্টা করলাম।

 

ঘটনা-২ঃ

মুদির দোকানে গেছি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে। মাস্ক নেই তার উপর বার বার  হাঁচি কাশি দিচ্ছে।

আমিঃ ভাই, আপনি মাস্ক পড়েন।আপনার এই হাঁচি কাশিতে আশেপাশে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

দোকানদারঃ ভাই, ভয় পাইয়েন না।এটা সিজনাল হাচি-কাশি।এমনিতেই সেরে যাবে।সবার ঘরে ঘরে এমন শুরু হইছে। এটা করোনা না।

আমিঃ কিভাবে বুঝলেন এটা করোনা না, আমরা তো সবাই টেষ্ট করাচ্ছি না।

দোকানদারঃভাই, আমাদের বডিতে আন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে।দেখেন না, বাংলাদেশের মানুষ খুব মাস্ক পড়ছে তারপরেও মরছে কম। মানুষ শুধু শুধু ভয় পায়। এসব ভাইরাস তাইরাস আমাদের দেখে ভয় পায়।হাহাহাহা।

আমি অব্যক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আর বলার কিছু পেলাম না। বুঝলাম জীবাণু নিয়ে মানুষের গবেষনা হয়তো শেষ পর্যায়ে।  কিছু বললে হয়তো  জীবাণু নিয়ে আমাকেই দু চার কথা শুনিয়ে দিবে

 ঘটনা-৩ঃ

সাহস করে সামাজিক দূরত্বহীন বাসে একদিন।মাস্কবিহীন বাসে আমার ডাবল মাস্ক দেখে নিজেকে ভিনগ্রহের কিছু বলে মনে হল। হঠাট  মাস্কবিহীন এক বন্ধুর সাথে দেখা।

আমিঃ কেমন আছো? অনেক দিন পর দেখা। কোথায় যাচ্ছো?

বন্ধুঃ ভাল নেই, কয়েকদিন ধরেই ঠান্ডা জ্বর কাশি।করোনা টেষ্টের স্যাম্পল দিছি। রিপোর্ট এখনোও দেয় নাই,দেখা যাক।

আমিঃ তা তুমি এভাবে ঘুরতাছ কেন? পজিটিভ আসলে তো আশে পাশের সবার তো সমস্যা। বাসায় থাকো।

বন্ধুঃ বাসায় থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না বন্ধু।তাই মাঝে মাঝে বের হই।আর আমার মত কত মানুষ আছে যারা কিনা সব জায়গায় যাচ্ছে।আমি তোমার পরিচিত, তাই টেষ্টের কথা বললাম,অনেকে তো বলেই না।রাস্তায় চলতে গেলে কত এমন মানুষ পাওয়া যাবে।এটা ভাইরাল , দু একদিনেই আবার ঠিক

হয়ে যাবে।

আমি বলার মত কিছু খুজে পেলাম না। না।কেমন যেন নিজেকেই অজ্ঞ মনে হল। দ্রুত বন্ধুর কাছে বিদায় নিয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে করলাম।পরক্ষনেই ভাবলাম, এমন ভাবে আর কত বন্ধুর কাছেই বা আমি নিরাপদ থাকবো,আশেপাশে  অনেকেই তো এমন রয়েছে।

আসছে শীতে নাকি করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। কোন প্রস্তুতি দেখছি না। এখন না হয় অফিস থেকে এসেই জামা কাপড় ধুয়ে দিচ্ছি, শীতে কিভাবে ম্যানেজ করবো সেটাই ভাবার বিষয়।অবস্থা যাই হোক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। যে পরিবার তার সদস্যকে হারাচ্ছে সেয় শুধু বুঝছে হারানোর কি বেদনা।আমার মাস্ক আমি পরবোই, এতে কে কি মনে করলো তাতে না ভাবাই উত্তম। বলা তো যায় না, সামান্য অসতর্কতার কারনে আগামীকালের মৃত্যুর  মিছিলে হয়তো আমি-আপনিই  যোগ দিতে পারি। জীবন অনেক সুন্দর, তাই একে ভালোবাসাই পরিবার এবং নিজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি।

জয় হোক মানবতার।

 লেখকঃ মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট ,দেশীয় ঔষধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত

মতামত দিন
Loading...